গল্প : অভিযোগ পার্ট: ০১#
খালাতো বোনের ড্রেস চেইঞ্জ করার সময়
তার রুমে নাকি উঁকি দিছিলাম। সেই অপরাধে আজ ৩
দিন ধরে একটা ঘরে বন্দি আমি। আটকে রাখা
হয়েছে৷
তিনদিনে কোনো খাবারও দেয়নি।
মেঘলা আমাদের বাসায়ই থাকে। তাই ব্যাপারটা
পরিবারের মধ্যেই আছে। বাইরে ছড়ালে
মেয়েটার বদনাম হতো। কিন্তু আমি এসব কিছুই
করিনি।
মেঘলা আব্বুর কাছে বিচার দিলো আর আব্বুও তার
কথা বিশ্বাস করে নিলো। আমার কথা কেউ
শুনলোই না, উল্টা আব্বু স্টিলের লাঠি দিয়ে
মারলো আমাকে৷ আম্মুও কিছু বললো না। তবে
উনার চোখেও ঘৃণা। মাও বিশ্বাস করে নিয়েছে
আমি এই কাজটা করেছি।
ছাদের অন্ধকার ঘরটাতে
হাত বেঁধে দরজায় তালা লাগিয়ে রাখা হইছে
আমাকে।
তিনদিন ধরে না খেয়ে থাকায় শরীরটা ভেঙে
পড়েছে। মাথা ব্যথা আর গ্যাস্টিক তো আছেই।
মেঘলার কথা মনে পড়তেই লজ্জা লাগতেছে।
মেয়েটা সামান্য একটা ভুলের জন্য এতবড় মিথ্যে
বললো আব্বুর কাছে।৷ আমি পাগল হয়ে গেছি
প্রায়, ড্রাগ নেইনা তিনদিন হলো।
আপনারা ভাবছেন আমার আব্বু আম্মুই বা কেমন?
তারা এরকম ছিলেন না। কিন্তু তারাও বাধ্য হয়েছেন
এমন হতে। দুবছর আগে ইন্টার পরীক্ষায় ফেল
করার পর থেকে তারা এমন হয়ে গেছেন।
অবশ্য ফেল করার কারণ ছিলো। নুসরাত।
বুঝতেই তো পারছেন কেনো। সে চলে
যাওয়ার পর নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি আমি।
এতোটাই আসক্ত ছিলাম যে তাকে ভুলতে আমার
ড্রাগ নেওয়ার প্রয়োজন হলো।
তারপর থেকে আব্বু আম্মু কেউ আমাকে
আগের মতো ভালোবাসেনা। আর মেঘলার
সাথে তো কখনোই পড়েনা আমার। কোনো
একটা ভুল পেলেই সে আমাকে শাস্তি দিয়েই
যাবে। ছোট খাটো থেকে হলেও এবারের
শাস্তিটা একটু বেশিই হয়ে গেছে।
আব্বু যখন আমাকে মারছিলো তখন তার দিকে
তাকাইছিলাম।
তার মুখে স্পষ্ট হাসি দেখতে পেয়ে আমি আর
তাকাইনি। চোখ নামিয়ে নিয়ে মার সহ্য করেছি।
প্রত্যেকটা আঘাত চোখ থেকে রক্তকান্না
বের করে এনেছে। বারবার বলেও কাজ হয়নি৷
আমি মাদকাসক্ত। করতেও পারি। আর মেঘলা ভুল
বলবেনা। এটা তাদের ধারণা নয় বিশ্বাস। যেই
সময়টায় আমার পরিবারের সাপোর্ট দরকার সেই
সময়ই তারা আমাকে বন্ধ রুমে আটকে
রেখেছে। দম বন্ধ হয়ে আসছে সত্যি। তৃষ্ণায়
গলা শুকিয়ে গেছে। একফোঁটা পানিও নেই ঘরে৷
অবশ্য বৃষ্টি হলে একটু পানি পাওয়া যেতো উপরে
একটু ফুটা আছে ওখান দিয়ে পানি পড়ে।
আজ চতুর্থ দিন। কেউ একবার দেখতেও আসেনি
আমাকে। বাড়ির কুকুরটা দুদিন না দেখলে তারও
খোঁজ নেয়। আর আমিতো আস্ত একটা মানুষ!!
যদিও তারা আর এখন আমাকে মানুষ ভাবেনা তাই
হয়তো।
এই ভাবে কয়টা দিন কেটেছে জানি না। কারণ যখন
আমার জ্ঞান ফিরলো তখন দেখি আমি নিজের
রুমে শুয়ে আছি। প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে। নিজের
শরীরটাই আলগাতে পারছি না। শরীরের প্রতিটা
অংশ ব্যথায় জর্জরিত।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম মেঘলার আমার রুমে
এলো। আমার চোখ খোলা দেখে মেঘলা
ব্যঙ্গ করে হাসলো।
_কিরে বেঁচে আছিস? আমরা তো মনে
করেছিলাম মরে গেছিস।
মেঘলার কথাটা শুনেই চোখ বেয়ে পানি পড়তে
লাগলো। এ বাড়ির মানুষজন আমায় এতটা ঘৃণা করে!!
কোন পশু যদি অসুস্থ হয় তাকে ও তো ডাক্তার
দেখানো হয়। আর আমাকে তারা? হয়ত তারা মৃত্যুই
কামনা করেছিল আমার।
আমি মেঘলাকে কোন মতে বললামঃ- অনেক
ক্ষুধা পেয়েছে একটু খেতে দিবি??
::;;;;::::;:::: চলবে :::::::::::::::।
Post a Comment