Header Ads

ads header

গল্প:- অভিযোগ। # পার্ট -2




_ আমার ক্ষুধার কথা শুনে মেঘলা বললোঃ "দেখি

ঝুটা কিছু আছে কি না।"

মেঘলার কথাটা শুনে বুকের ভিতরটা মুচড়ে

উঠলো। আমি আজ এত অবহেলিত? সব ওই

নুসরাতের জন্য। একটু পর মেঘলা একটা প্লেটে

কিছু ভাত সাথে আলু ভর্তা আর ডাল দিয়ে গেলো।

ক্ষুধার তাড়নায় দেখার সময় ছিলনা কেমন ছিল

খাবারগুলা। তবে খাবার গুলো কেমন টক টক

লাগছিল। এই ভাবেই চলছে আমার দিন। একদিন রাতে

খাবার খাইতে বসছি এমন সময় আব্বু এলো রুমে।

_রাফি,প্লিজ তুই আমাদের মুক্ত কর। তোর জন্য

এলাকায় যে সম্মান ছিল তা তো অনেক আগেই

চলে গেছে এখন অন্তত ঘরের শান্তি টুকু টা ও

কেড়ে নিস না।

রাতে ঘুমানোর সময় বাবার বলা কথাটা চিন্তা করতে

লাগলাম। আসলেই তো! আমি তো শেষ হলাম

নুসরাতের জন্য। সাথে বাবা মায়ের সম্মান ও শেষ

করে দিলাম। এবার তাদের মুক্ত করে দিব।

যেখানে নুসরাত আমায় ছেড়ে অন্যের সাথে

খুব ভালোভাবেই সংসার করছে সেখানে আমি

উল্টো। আমি আর এই বাড়ি তে কাউকে আমার মুখ

দেখাবো না। কিন্তু যাবই বা আর কোথায়?

যেখানেই যাই তবে আমি আমার জীবনের এই

দুই বছরের গল্পটা পালটাতে চাই।

রাতে আব্বু আম্মুর জন্য একটা চিরকুট লিখলাম।

"বাবা আর আম্মু আজ থেকে তোমরা মুক্ত।

তোমাদের অবাধ্য সন্তান নামের কুলাঙ্গারকে

আর দেখতে হবে না। জানি না,আজ থেকে

আমার কোথায় স্থান হবে। তবে মৃত্যুর পর ও

আমার লাশ তোমাদের সামনে আসবে না এই

প্রমিস করছি। জন্মের পর থেকে কতই না

জ্বালিয়েছি তোমাদের। তবে আম্মু তোমার

দুধের ঋণ ছাড়া বাকি সব ঋণ শোধ করে দিব যদি

বেঁচে থাকি।"

মেঘলার জন্যও একটা চিরকুট লিখে আসলাম।

"আসলে তুই না থাকলে আমি জানতে ও পারতাম না

আমি কতটা নিচু স্থানে বাস করতাম এ বাড়িতে। আর

হ্যাঁ আজ থেকে এই নেশাখোরটাকে আর

দেখতে হবে না তোকে। ভালো থাকিস। আর

আব্বু আম্মুকে একটু দেখে রাখিস।"

বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসলাম। কিন্তু যাবটা

কোথায় এখন! যাওয়ার মত বন্ধু বান্ধব বা আত্মীয়

স্বজন ও তো নেই। সেই ভোর থেকে হাঁটা

শুরু করলাম। সন্ধ্যার দিকে প্রচুর ক্ষুধাও লাগছিল।

হাতে একটা ঘড়ি ছিল। নুসরাতের দেওয়া। ভাবলাম এটা

বিক্রি করে কিছু খেয়ে নেই। কিন্তু নুসরাতের

এই স্মৃতিটা কিছুতেই হারাতে চাচ্ছিলাম না। তাই আর কি

না খেয়ে বসে রইলাম। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে

ক্রমশ। আর এদিকে ক্ষুধাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে তার

সাথে৷ তাই আরেকটু হেঁটে মসজিদের অজুখানা

থেকে পানি খেয়ে নিলাম। রাত গভীর হওয়ার

সাথে সাথে ভয় হচ্ছে আমার। আশ্রয় হবে কি

রাতের? ১.০০ দিকে একটা বাড়ির গেট খোলা দেখা

যায়। আমি ভাবলাম রাতটা এখানেই কাটিয়ে দেই ।

সকালে ঘুম ভাঙ্গল একজন মহিলার ডাকে।

_ এই ছেলে এখানে ঘুমিয়ে আছো যে? তুমি

কে আর এখানেই বা ঘুমিয়ে ছিলে কেন।

_ আন্টি আমি আমার নিজের পরিচয় দেওয়ার মত কিছু

নেই। রাত অনেক হয়ে গিয়েছিল। আর থাকার জায়গা

ছিল না। পেটে অনেক ক্ষুধা থাকায় এখানে ঘুমিয়ে

গিয়েছিলাম। সরি আন্টি।

এই বলে আমি হাঁটা শুরু করলাম তখনই পেছন

থেকে ডাক আসলো আবার।

_ এই ছেলে --শোনো??

_ জী আন্টি বলুন।

_তোমায় দেখতে তো অনেক দুর্বল দেখা

যায়। রাতে খেয়েছো কিছু?

_ না আন্টি। এখন কোনো জায়গা থেকে পানি

খেয়ে নিব।

_ পানি খেলে কি আর ক্ষুধা যায়? চলো আমার

সাথে। খেয়ে নিবে।

_ আন্টি রাতের আঁধারে আপনার বাড়িতে থেকেছি

এর জন্য আমায় কথা শুনাননি এতেই আমি কৃতজ্ঞ ।

_ এই বেশি কথা না বলে চলো খেয়ে নিবে।

পেটের ক্ষুধার কাছে শেষ পর্যন্ত আমাকে হার

মানতে হলো। আর কিছু না বলে উনার পিছু পিছু

বাসার ভিতরে ডুকলাম। ভিতরটা বেশ সুন্দর। একটু পর

আমায় খেতে দিল আন্টি। ক্ষুধা অনেক থাকায়

প্লেটের সব খেয়ে আমি আন্টির দিকে

তাকালাম।

_ বসো আমি আরো নিয়ে আসছি।

খাবার খাওয়ার পর আন্টি বললেনঃ- বাবা তুমি এখন

কোথায় যাবে।

_ আন্টি জানি না কোথায় যাব।

_ তুমি কি কাজ করতে পারবা?

_ কেমন কাজ আন্টি?

_ এই ধরো আমাদের বাসার অনেক কাজ ই থাকে।

তুমি কি করতে পারবা?

_ হ্যা পারব আন্টি। আপনি শুধু আমায় খেতে আর

থাকতে দিলেই হবে।

_ পাগল ছেলে। কাজ করলে খাওয়া আর থাকা ছাড়া ও

বেতন দেব ।

_ ঠিক আছে আন্টি। আমি আপনাদের সব কাজ

নিজের পরিবার মনে করে করব। মনে করার কি

আছে।!আজ এখানে ঠাঁই না হলে আমার যে না

খেয়ে মরতে হত। আচ্ছা আন্টি আপনি কি একাই

থাকেন এই বাড়িতে।

_ না,আমার সাথে আমার মেয়ে সোহানা থাকে। ও

নানু বাড়ি গেছে। আগামীকাল আসবে ।

_ আর আঙ্কেল?

_ তোমার আঙ্কেল গত দুই বছর আগে

আমাদের ছেড়ে ওপাড়ে চলে গেছে।

_ সরি আন্টি। আমি না বুঝে আপনাকে দুঃখ দিয়ে

দিলাম।

_ আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার নাম কি?

_ জী আন্টি রাফি।

_ লেখাপড়া করেছো কি?

_ আন্টি গত দুই বছর আগে ইন্টারে পাশ করতে

পারি নাই। আর তারপর লেখা পড়া করা হয়নি।

_ তোমার পরিবার নাই? ওরা কিছু বলে নাই?

_ প্লিজ আন্টি পরিবারের কথা বলবেন না। আমি

আমার ভংঙ্কর অতীত ভুলে যেতে চাই ।

_ ওকে তোমার কাজ হল আমাদের বাড়ীর বাগানটা

দেখে রাখা আর আমাদের সুবিধা অসুবিধা পাশে থাকা।

আর তুমি চাইলে স্টাডি ও নতুন করে শুরু করতে

পারো। এখন বিশ্রাম নাও। ওইটা তোমার রুম।

রুমে এসে ভাবতে লাগলাম। নিজের পরিবার রাস্তায়

ছুঁড়ে মারলো। আর অচেনা কেউ বলা যায় আমার

জীবন ফিরিয়ে দিলো। বড় আজব এই দুনিয়া!

পরের দিন বাগানটা ঘুড়ে দেখলাম। একটা গোলাপ

খুবই ভালো লাগলো। তাই গোলাপটা ছিঁড়ে নিলাম।

যেই ছিঁড়লাম ঠিক তখনই পেছন থেকে একটা

মেয়ের গলার শব্দ শুনতে পেলাম।

_এই ছেলে এখান থেকে ফুল ছেঁড়ার সাহস হয় কি

করে তোমার?

.

চলবে..........__......

No comments